অন্যরকম

ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে সোজা রূপোলি পর্দায়, এক তালিতেই বাঙালিকে বশে করে ফেলেছিলেন গুপি গাইন

এক তালিতেই তারা বেশ বদলাতে পারত। ইচ্ছে হলেই যেখানে খুশি যেতে পারত। বোধহয় হাত তালির ম্যাজিকেই বাঙালিকেও বশ করে ফেলেছিল তাঁরা। অনবদ্য অভিনয়ে জীবন্ত করে তুলেছিল গুপী আর বাঘাকে। রবি ঘোষ আগেই নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন। এবার বাংলা সিনেমা খুঁজে পেয়েছিল আর এক কিংবদন্তীকে। তপেন চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৭ সালের আজকের দিনেই জন্মেছিলেন তিনি। কিন্তু কীভাবে সিনেমায় এলেন তিনি ? কীভাবে অমর হয়ে গেল গুপি গাইন ? আসুন, আলাপ করা যাক গুপি গাইনের সঙ্গে।

সত্যি বলতে এখানেও ভুতের রাজার ম্যাজিক ছিল। তবে এই ম্যাজিশিয়ন হলেন সত্যজিৎ রায়। জহুরি ঠিক চিনে নিয়েছিলেন জহরকে। বলা বাহুল্য, শুরু থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না তপেন চট্টোপাধ্যায়। তবে নিয়তির পরিকল্পনা অন্যরকম ছিল। প্রথম জীবনে একজন ইঞ্জিনিয়র হিসেবে রাজস্থানে কাজ করতেন তপেন চট্টোপাধ্যায়। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু সেখানে বেশিদিন মন টেকেনি। তল্পি-তল্পা গুটিয়ে ফিরে আসেন কলকাতায়। এবার নতুন কাজের সন্ধান। শহরে ফিরে যোগ দেন সন্দেশ পত্রিকায়। তৎকালীন বাংলা শিশু পত্রিকা সন্দেশের বিজ্ঞাপন বিভাগে কাজ শুরু করেন তিনি। আর এখান থেকেই জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। প্রতিভা চিনতে একেবারেই ভুল করেননি পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তাঁর হাতে ধরেই মহানগরে তপেনের ক্যামিও। বড়পর্দায় পথচলা শুরু।

ননীগোপালের বিয়ে, গুপী গাইন বাঘা বাইন, ধন্যি মেয়ে, সঙ্গিনী, গণদেবতা, আঁচল, হীরক রাজার দেশে, গুপী বাঘা ফিরে এল। একের পর এক সিনেমায় নিজেকে আরও নিখুঁত করে তোলেন। সত্যি বলতে সেই হাসি, সারল্য আর সাবলীল অভিনয় আজও ভোলা যায়। তবে গুপি-বাঘার সিরিজ তপেন চট্টোপাধ্যায়কে অমর করে দেয়। গুপি গাইন হয়েই তিনি বাঙালির মনে গেঁথে যান। শোনা যায়, গুপি-বাঘার শ্যুটিং করতে গিয়ে প্রথমের দিকে একটু অসুবিধেয় পড়েছিলেন তপেন বাবু। অনুপ ঘোষালের গানে ঠোঁট মেলাতে বেশ সমস্যা হত তাঁর। তবে ইঞ্জিনিয়র মানুষটির প্রচেষ্টা ও প্রতিভার কাছে কোনওকিছুই অসম্ভব ছিল না। একসময় এই গানগুলির সঙ্গেই মিশে যান। পর্দায় দেখে মনে হত, যেন নিজেই গেয়ে চলেছেন তপেন চট্টোপাধ্যায়। অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে “আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে” আজও বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

শেষের দিকে ফুসফুসের রোগে ভুগতে শুরু করেন তপেন চট্টোপাধ্যায়। শোনা যায়, ফুসফুসের রোগ নিয়েই প্রতিদিন যথাসময়ে গুপি বাঘা ফিরে এল সিনেমার সেটে পৌঁছে যেতেন তিনি। শ্যুটিং নিয়ে কোনওদিন কোনওরকম আপোষ করেননি। কাউকে বুঝতে দেননি নিজের শ্বাসকষ্টের কথা। সিনেমার গুপি গাইনে দেখলে মনেই হয় না, শ্বাসকষ্ট নিয়ে একটা মানুষ ওইরকম সাবলীল অভিনয় করে চলেছেন। কী করেই বা বুঝতে দেবেন ?
ভুতের রাজা যে গুপিকে বর দিয়েছিলেন। তাঁকে বশ করা তাই নিয়তির সাধ্যের মধ্যেও ছিল না। মৃত্যুও তাঁকে বশ করতে পারেনি। তাই তো এত বছর পরও গুপি গাইনের গান শুনলে নড়া যায় না। যেন চুপটি করে পাথর হয়ে বসে শুনে যেতে ইচ্ছে করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *