তাঁকে বুঝতে বোধহয় দেরি হয়ে গেছিল, সেদিন অভিমানেই কি জাতীয় পুরস্কার ফেরালেন সৌমিত্র ?
উত্তম তখন খ্যাতির মধ্য গগনে। আর সেই স্টারডমে ঢেকে যাওয়া শহরের একপ্রান্তে নিজের জগত তৈরি করে চলেছেন এক যুবক। সত্যজিতের হাত ধরে একের পর ক্লাসিক উপহার দিয়ে গেছেন। কিন্তু স্বীকৃতি মিলতে কি বড্ড দেরি হয়ে গেল ? বছর উনিশ আগের ঘটনা বোধহয় সেই ইঙ্গিত দেয়।
উত্তম কুমারের সময়কালে ও উত্তম কুমার পরবর্তী সিনেমায় তিনি সমান দক্ষতা ও বুদ্ধিদীপ্ততায় একের পর চরিত্রকে জীবন্ত করেছেন। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে অনেকেই হারিয়ে গেছেন। কিন্তু সৌমিত্রের মগজাস্ত্রে কখনও মরচে ধরেনি। পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিতের সময়েও তিনি একাধিক পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে গেছেন। সময়ের চাহিদাকে মাথায় রেখে বাবা-জ্যাঠা, গানের গুরু এমনকি ভিলেনের রোলও করেছেন। আর এইসবকিছুর সঙ্গে সঙ্গে অন্যধারার ছবির সঙ্গেও আপোষ করেননি কোনওদিন। কিন্তু এই প্রতিভা, এত প্রচেষ্টা বোধহয় বড্ড দেরিতে স্বীকৃতি পেয়েছিল।
২০০১ সাল। সেবার জাতীয় পুরস্কারের মনোনয়ন পেলেন। গৌতম ঘোষের দেখা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত করা হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু তা ফিরিয়ে দেন তিনি। শোনা যায়, সেইসময় ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড কমিটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিলেন সৌমিত্র। অভিযোগ ছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো সিনেমাকে রাজনীতির শিকার হতে হয়। আর সেই প্রতিবাদেই সেবার জাতীয় পুরস্কার নিতে যাননি তিনি। সিনেপাড়ার অনেকে বলেছিলেন বড্ড দেরি হয়ে গেল। এই স্বীকৃতি অনেক আগেই পাওনা ছিল সৌমিত্রবাবুর।
তবে পরে অর্থাৎ ২০১২ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দাদাসাহেব ফাল্কে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এই পুরস্কার পেয়ে অবশ্য খুশি হয়েছিলেন তিনি। সেবার জানিয়েছিলেন,”খুব ভালো লাগছে। অন্তত এই পুরস্কার সমকালীন রাজনীতি থেকে দূরে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছি। আজ আমার কাজ মর্যাদা পেল।”