অন্যরকম

কেরালার এই শিল্পী জিভ দিয়ে রাঙিয়ে তোলেন ক্যানভাস

আপনি আপনার জিভ দিয়ে কী করেন? খাবার খান, খাবারের স্বাদ নেন। কিন্তু এই ব্যক্তির কাছে জিভের ব্যবহার অন্য। নিজের ভাবনাকে মেলে ধরতে জিভকে ব্রাশের রূপ দিয়েছেন তিনি। জিভ দিয়েই ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন একের পর এক সৃষ্টি। অনি ভরনম। কেরালার করুণাপল্লির এই টাং আর্টিস্টকে দেখলে ছবি আঁকা সম্পর্কে আপনার ভাবনাই বদলে যেতে পারে।

ছবি আঁকেন ছোটো থেকেই। আগে ব্রাশ দিয়েই আঁকতেন। কীভাবে এল এমন বিরল চিন্তাভাবনা? শিল্পীর কথায়, আমি একজনকে ছবি আঁকা শেখাতে গেছিলাম। তিনি বিশেষভাবে সক্ষম ছিলেন। সেখান থেকেই শেখা ব্রাশ ছাড়াও অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করেও আঁকা যায়। ১৯৯৭ সালে একটি প্রতিবেদনে পড়েন এক শিল্পীর পা দিয়ে ছবি আঁকার গল্প। সেখান থেকেও অনুপ্রাণিত হন। সেই শুরু। ২০০০ সালের পর থেকে জিভ দিয়েই রাঙিয়ে তোলেন একের পর এক ক্যানভাস। প্যালেট থেকে একে একে রং নিয়ে জিভ দিয়ে মেশান। তুলির টানও সেই জিভ দিয়েই। এমনভাবেই তৈরি করেন একাধিক পোস্ট্রেইট বা ল্যান্ডস্কেপ ছবি। তার জিভের কেরামতিতেই ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে ওঠে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধি।

শুধু কোনও এক ধরনের রং নয়, যেকোনও রং দিয়ে যেকোনও পেপার বা ক্যানভাস জিভের দ্বারা রাঙিয়ে তুলতে পারেন এই শিল্পী। তাঁর কথায়, ভগবানের দয়ায় আমার জিভ এমন, যা দিয়ে আমি যেকোনও ধরণের ছবি আঁকতে পারি। একবার কম সময়ের মধ্যে লাস্ট সাপার এঁকে গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলার চেষ্টা করেন। প্রথমের দিকে তো কেউ জানতই না অনি বর্মনকে। তবে সৃষ্টিকে সীমাবদ্ধ রাখা মুশকিল। একে একে জাপান, ইতালি থেকে বহু চিত্রশিল্পী ছুটে আসেন অনির কাছে। তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বহু পুরস্কারও তুলে দিয়েছেন।

ব্রাশের বদলে জিভ, সমস্যা হয়নি কখনও ? ভারতের প্রথম এই টাং আর্টিস্টের কথায়, ব্রাশ ব্যবহার করে ছবি আঁকতে আমার যতো সময় লাগে, তার থেকে জিভে কম সময় লাগে। আমার মনে হয়, জিভ দিয়ে আঁকা অনেক সোজা। বারবার ব্রাশ পরিবর্তন করতে হয় না। বিভিন্ন সাইজ়ের ব্রাশ চেঞ্জ করতে হয় না। যেমন ইচ্ছে জিভকে ব্যবহার করতে পারি।

এখনও পর্যন্ত জিভ দিয়ে হাজারেরও বেশি ছবি এঁকেছেন। পেয়েছেন URF এশিয়ান রেকর্ড। বর্তমানে অনিবাবু করুণাগাপল্লির একটি স্কুলে কনভেনশনাল আর্ট শেখান। ব্রাশ ছাড়া আঁকতে শেখান ছাত্র-ছাত্রীদেরও। যারা তাঁর মতো অন্য কিছু করতে চান ছবি আঁকার সঙ্গে, তাদের তিনি নিজের বাড়িতে এনে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেন।

এমন অসামান্য প্রতিভাবান শিল্পীর প্রতিভা এখানেই শেষ নয়, এই শিল্পী শুধু জিভের দ্বারাই নয়, নিজের কনুই, নাক, পায়ের পাতা এমনকি থুতনির সাহায্যেও ছবি আঁকতে পারেন। একবার চলন্ত বাইকে ছবি এঁকেও নজির গড়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *