বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছাড়েন, সেদিনের স্যান্ডইউচ বিক্রি করা তরুণের প্রেমে আজও মজে সিনেপ্রেমীরা
বলিউড হারাল আরও এক কিংবদন্তীকে। কিন্তু মহম্মদ ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার হয়ে ওঠার এই লড়াইটা এতটাও সহজ ছিল না। অদম্য জেদ, কিছু করার তাগিদ যেন বরাবরই আলাদা করে দিয়েছিল এই অভিনেতাকে। শুরুটা হয়েছিল পুনের সেই স্যান্ডউইচ দোকান থেকে।
১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর। অবিভক্ত ভারতের কিসসা খাওয়ানি বাজারের (বর্তমানে পাকিস্তানের পেশোয়ার) ব্যবসায়ী লালা গুলাম সারওয়ার খানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মহম্মদ ইউসুফ খান। বিস্তর জমি জায়গা, ফলের ব্যবসা সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা খারাপ ছিল না। তবে পরিবার অনেক বড় ছিল। ১২ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ নম্বরে ছিলেন ইউসুফ। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। তাই শুরু থেকেই নিজেকে আলাদাভাবে গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু অভিনয়ের ইচ্ছে ও নানান খুঁটিনাটি কারণে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে তরুণ ইউসুফের।
শেষমেশ উঠতি তারুণ্যে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। নতুন গন্তব্য পুনে। এখানে এসে নানারকম কাজ করতে শুরু করেন। পরিচয় গোপন করে কখনও ক্যানটিন কন্ট্রাক্টরের কাজ করেন। কখনও আবার আর্মি ক্লাবে স্যান্ডউইচ বিক্রি করেন।
পুনের এই স্যান্ডউইচ দোকান থেকেই ইউসুফের ভবিষ্যৎ অন্যদিকে মোড় নেয়। তৎকালীন সময়ে ইউসুফের ভাঁড়ারে প্রায় ৫ হাজার টাকা জমেছিল। পরিবারের ব্যবসায় কোনওদিন মন টেকেনি। তাই জমা টাকা নিয়ে এবার মুম্বইয়ের পথে। সেখানেই দেখা হয় দেবিকা রানির সঙ্গে। সেইসময় বম্বে টকিজের মালকিন ছিলেন দেবিকা রানি। সংস্থাটি বেশ কয়েকটি ছবি তৈরি করেছিল। বেশ কয়েকটির কাজ শুরু হয়েছিল। দেবিকা রানির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পাশাপাশি অশোক কুমারের সঙ্গেও সখ্যতা গড়ে ওঠে। ইউসুফের একটু ভিন্ন ঘরানার অভিনয় নজর কেড়েছিল দেবিকা রানি ও অশোক কুমারের।
প্রথম প্রথম শ্যুটিং টিমের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন ইউসুফ। পরে বম্বে টকিজের সঙ্গে চুক্তি হয়। বেতন ছিল ৫০০ টাকা। বছরের শেষে ২০০ টাকা করে বেতন বাড়ত। কিন্তু প্রতিভাকে এভাবে আটকে রাখা অসম্ভব। সে তার গন্তব্য নিজের মতো করেই খুঁজে নেয়। এবার পাকাপাকিভাবে অভিনয়ে পা রাখার সময়। ইউসুফকে বলিউডের রোম্যান্টিক হিরো হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা করলেন দেবিকা। কিন্তু নামের জেরে সমস্যা দেখা দিল। দেবিকার মনে হল, রোম্যান্টিক হিরো হওয়ার পথে ইউসুফ খান নামটি বড্ড বেমানান।
এবার নাম নির্বাচন শুরু হয়। ইউসুফের জন্য তিনটি নামের প্রস্তাব দেন দেবিকা রানি। জাহাঙ্গির, বাসুদেব ও দিলীপ কুমার। শেষমেশ দিলীপ কুমার নামটি বেছে নেন মহম্মদ ইউসুফ খান। তাঁর মনে হয়েছিল এই নামের আড়ালে প্রাথমিকভাবে কিছুটা হলেও বাবার কাছ থেকে নিজের পেশার কথা লুকোনো যাবে। সেই শুরু। ১৯৪৪ সালে জোয়ার ভাটা সিনেমার মধ্য দিয়ে বলিউডে পা রাখেন। প্রথম ছবি সেভাবে সফল হয়নি। বেশ কয়েকটি অসফল ছবির পর ১৯৪৭ সালে জুগনু সিনেমার মধ্যে দিয়ে সবার নজরে আসেন দিলীপ কুমার। বাকিটা ইতিহাস।