দুয়ারসিনির দুনিয়া

উইকেন্ডে তেমন কোনও প্ল্যানিং নেই। যদি কয়েকটা দিন একটু দূরে কোথাও গিয়ে সবুজের ছোঁয়া পেতে কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে একটা নদীর শব্দ মাখা জ্যোৎস্না রাত কাটাতে ইচ্ছে হয়, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন দুয়ারসিনির জঙ্গল।

পুরুলিয়ার দুয়ারসিনি। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে নদী আর পাহাড় ঘেরা সবুজের প্রান্তর। যতদূর চোখ যায় শাল পিয়াল,সেগুনের জঙ্গল। আর এরই সঙ্গে সবর,খেড়িয়া,মুণ্ডা,সাঁওতালদের গ্রাম। বাড়তি পাওনা তাদের সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন। সত্যি বলতে, যে কোনও সময়ে উপভোগ্য দুয়ারসিনি। তবে গরম আর ঘন বর্ষার জঙ্গল এড়িয়ে চলাই ভালো। অক্টোবর থেকে এপ্রিল দুয়ারসিনির দুনিয়া ঘুরে দেখার সেরা সময়। ছোটো পাহাড়, টিলা আর গ্রাম ঘেঁষে সাতগুড়ুম নদী। উল্লেখ্য়, এই সাতগুড়ুম নিয়ে নানান কথা প্রচলিত। কেউ বলে পাহাড়ে সাতবার পাক খেয়েছে সাতগুড়ুম। কেউ বলে পাহাড় থেকে নেমে সাতটি ধারায় ভাগ হয়ে গেছে এই নদী।

সকাল সকাল পাখিদের কলরব আর সাতগুড়ুমের জলের শব্দে আপনার ঘুম ভাঙুক। তারপর বেলা বাড়লেই চারটি খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন জঙ্গলের রহস্য সন্ধানে। কপাল ভালো থাকলে দেখা পেতে পারেন হাতি হায়না নেকড়েদের। এবার একটু পাহাড়ের পথে এগোন। ঘুরে আসুন ভালো পাহাড়। দুপুরের ভোজনে পেয়ে যেতে পারেন গরম ভাত,দেশী মুরগীর ঝোল। এরপর অল্প জিরিয়ে নেওয়া ভালো। রোদ পড়লে ঘুরে আসুন পাশের সবর,খেড়িয়া,মুণ্ডাদের গ্রাম। ঠেকাদহ,মেঘাদহ,আসানপানি একের পর এক গ্রাম। গোধূলি কাটুক হাটে। হস্তশিল্প থেকে শাকসবজি নানান জিনিস পেতে পারেন। তবে, হাটের জিলিপির স্বাদ দীর্ঘদিন মুখে লেগে থাকবে।

সাতগুড়ুম নদী

ঝিঁঝির ডাকে সাতগুড়ুমের তীরে নামুক সন্ধ্যা। জ্যোৎস্না রাতে সাঁওতালি নাচ,ধামসা মাদলের ছন্দে মেতে উঠুন। যদি কয়েকদিন থাকার প্ল্যান থাকে তাহলে ঝাড়খণ্ডেও এক চক্কর মেরে আসতে পারেন। ঘুরে দেখতে পারেন ঝাড়খণ্ড প্যালেস, কুরুম্বেরা দুর্গ, সাবিত্রী মন্দির,উমাপতি মন্দির।

ঠাঁই : ২০১০-এর মাওবাদী হামলার পর একটু এলোমেলো ছিল পরিস্থিতি। তবে এখন সব ঠিকঠাক। পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের বাংলো রয়েছে। সেখানে থাকতে পারেন। পাশে বান্দোয়ান শহরে কিছু হোটেল-লজ রয়েছে। এছাড়া গ্রামের কুঁড়ে ঘরেও মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করতে পারেন।

যাত্রাপথ : হাওড়া থেকে ঘাটশিলা পর্যন্ত ট্রেন। সেখান থেকে ২০-২৫ কিমি দূরে গন্তব্য। হাওড়া থেকে সকাল ৬ টা ৫৫ মিনিটে ট্রেন। হাওড়া থেকে ঘাটশিলা। সেখান থেকে গালুডি। ট্রেনের সময়সূচির পরিবর্তনও হতে পারে। স্টেশন চত্বর থেকেই গাড়ি পেয়ে যাবেন। কলকাতা থেকে ২৬৫ কিমি দূরে দুয়ারসিনি। তাই গাড়ি করেও যেতে পারেন। কলকাতা-বর্ধমান রোড, কলকাতা-বিষ্ণুপুর রোড বা কলকাতা-ঝাড়গ্রাম রোড ধরে বেরিয়ে পড়তে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.