উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচে নরখাদক নেকড়ের তাণ্ডব: আতঙ্কিত গ্রামবাসী
উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় নেকড়ের আক্রমণ ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত দেড় মাসে নেকড়ের তাণ্ডবে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ১০ জন, যাদের মধ্যে ৭ জনই শিশু। আহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫১ ছাড়িয়েছে। নেকড়ের দল প্রধানত রাতে আক্রমণ চালাচ্ছে, যার ফলে গ্রামবাসীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এবং আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বাহরাইচের কিছু অঞ্চলে দরজাহীন ঘর এবং বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতি থাকার ফলে নেকড়ের হামলার শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
নবনও গারেথি গ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ২ বছর বয়সী একটি শিশুকে নেকড়ে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে তার আংশিক খাওয়া দেহাবশেষ জঙ্গলে উদ্ধার করা হয়। একই দিন বারবিঘা গ্রামে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধাও নেকড়ের আক্রমণে গুরুতর আহত হন। এই ধরনের ঘটনা গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এই ক্রমাগত আক্রমণ প্রতিরোধে প্রশাসন ‘অপারেশন ভেড়িয়া’ চালু করেছে।এইমুহুর্তে ছয়টি নেকড়ের মধ্যে চারটি ধরা পড়েছে, কিন্তু দু’টি নেকড়ে এখনও ধরা যায়নি। নেকড়ের দলকে আকৃষ্ট করতে বনবিভাগ শিশুদের মূত্রে চুবানো খেলনা ব্যবহার করছে এবং ড্রোন ক্যামেরা ও থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের তরফ থেকে এলাকায় পেট্রোম্যাক্স লাইট সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে যাতে বিদ্যুৎহীন গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো যায়।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে বনবিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নেকড়ের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং তাদের সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবুও, গ্রামবাসীরা এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
গ্রামগুলোতে এখনো স্লোগান শোনা যাচ্ছে—’জাগতে রাহো, জাগতে রাহো’—যা প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আট থেকে আশি, সবাই আতঙ্কে কাটাচ্ছেন দিন। প্রশাসনের কঠোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, নেকড়ের তাণ্ডব কবে থামবে এবং গ্রামবাসীরা কবে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন, তা এখনো অনিশ্চিত।