খবরখেলা

ফাইনালে উঠেও স্বপ্নভঙ্গ ফোগাটের, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ বিরোধীদের

আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন সারারাত ধরে। জগিং, স্কিপিং, শরীর থেকে রক্ত বাদ দেওয়া কিছুই বাদ রাখেননি। কিন্তু মাত্র ১০০ গ্রামের জন্য শেষমেশ প্রতিযোগিতা থেকেই বাদ পড়লেন বিনেশ ফোগট। ৭ আগস্ট বুধবার রাতে আমেরিকার সারা হিলডেব্রান্টের বিরুদ্ধে লড়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু এদিন সকালে ওজন মাপলে দেখা যায়, ৫০ কেজির থেকে মাত্র ১০০ গ্রাম বেশি হচ্ছে আর তাই প্রতিযোগিতা থেকেই বাদ পড়লেন। এভাবে ফোগাটের স্বপ্নভঙ্গে গোটা দেশ স্তম্ভিত। রাতারাতি এমন ঘটনার নেপথ্যে কোনও চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।

মঙ্গলবার সকালে ৪৯.৯ কেজি ওজন হয় বিনেশের। যদিও তাঁর স্বাভাবিক ওজন ৫৭ কেজি। ৫০ কেজিতে রাখার প্রাণপন চেষ্টা করছিলেন তিনি। অলিম্পিক ক্যাম্পের একজন সদস্য বলেন সারাদিনে যখনই তিনি কিছু খাচ্ছিলেন ওজন ৫৩ কেজি পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছিল। না খেয়ে থাকা সম্ভব ছিল না, কারণ লড়ার জন্য শক্তি কমে যাবে। মঙ্গলবার রাতে ওজন মাপা হলে জানা যায় ২ কেজি ওজন বেশি রয়েছে তাঁর। সারারাত ধরে আপ্রাণ চেষ্টা চালান। তারপর থেকে একফোঁটা জল বা খাবার খাননি। সারা রাত ঘুমোননি। জগিং, স্কিপিং কিছুই বাদ দেননি। ঘামও ঝরান তিনি। শরীর থেকে রক্ত বের করে দেন। চুল কেটে দেন। তাতে ওজন অনেকটাই কমে যায়। তবুও শেষ রক্ষা হল না। বুধবার সকালে ওজন ৫০.১ কেজিতে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে সব শেষ। এই ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন ফোগাট। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন জলের অভাবেই এই বিপত্তি। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান পি টি ঊষা। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

বিনেশের বাদ পড়া নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

এই সিদ্ধান্তে ষড়যন্ত্র থাকার অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। মঙ্গলবারেই যিনি ফাইনালে ওঠার জন্য যোগ্য ছিলেন এমন কি হল যাতে ফাইনালে খেলতেই পারলেন না তিনি? সংসদে প্রশ্ন বিরোধীদের। তাদের মতে, ফাইনালে পৌঁছেও এভাবে বাদ পড়া সাধারণ ঘটনা হতে পারে না। এর পিছনে নিশ্চই কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। এমনকি এর পিছনে ভারত সরকারের হাত থাকার অভিযোগও করেছে তারা। আবার সংসদের এক অংশের যুক্তি, পদক এলে তো ভারতেরই লাভ। কেন এরকম করবে তাঁরা?

ফোগাটের বাদ পড়ার খবর আসতেই ষড়যন্ত্রের প্রশ্ন উঠে আসে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। তাঁর বাদ পড়ার সঙ্গে আগের বছরে BJP নেতা এবং বৃজভূষণের সিংহের বিরূদ্ধে আন্দোলনে বিনেশের অংশ নেওয়ার সংযোগ করতে থাকেন নেটাগরিকেরা। এরফলে নতুন করে চর্চায় এসেছে আগের বছরে কুস্তিগীরের আন্দোলন। BJP সাংসদ ও কুস্তির জাতীয় সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি বৃজভূষণের সিংহের বিরুদ্ধে কুস্তিগীদের। সেইসময় তাদের জোর করে তুলে দেয় দিল্লি পুলিশ। রাস্তায় পদক ফেলে প্রতিবাদ করেন তাঁরা। সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন বিনেশ। ফাইনালে ওঠার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে থাকে আন্দোলন থেকে তাকে বলপূর্বক তুলে দেওয়ার ছবি। বিরোধীদের সন্দেহ তাতেই হয়েছে এই ফল। X হ্যান্ডেলে বিবৃতি দিয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব এর পিছনের আসল সত্য বের করার জন্য তদন্ত করার অনুরোধও জানিয়েছেন।

মেডেলজয়ী বক্সার বিজেন্দ্র সিংহ X- এ পোস্ট করে অভিযোগ করেন, “ভারত এবং ভারতীয় কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা এক রাতে ৫ থেকে ৬ কেজি ওজন কমিয়ে নিই। তাহলে ১০০ গ্রাম কেন কমানো গেল না? কোন একজনের ব্যক্তিগত সমস্যার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।”

কিন্তু কেন এমনটা হল?

এই প্রশ্নের উওর দিয়েছেন চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ দিনশ পার্দিবালা (Dr Dinshaw Pardiwala)। তিনি জানিয়েছেন, “কুস্তিগীরেরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে কম ওজনের বিভাগে লড়াই করেন। তাই ওজন কমাতে খাবার এবং জল খাওয়া কমিয়ে ব্যয়াম এবং সনায় ঘাম ঝরিয়ে ওজন কমানো হয়। সকালে ওজন পরিমাপ হয়ে গেলে, লড়াই করার শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কম জল এবং হাই এনার্জি খাবার দেওয়া হয়। যার ফলে ওজন বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

এদিকে কোনোরকম ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ইন্ডিয়ান এটি অ্যাথলেটিক বডির কর্তা আদিলে সুমারিওয়ালা (Adille Sumariwalla)। তিনি জানিয়েছেন, “কোনো ষড়যন্ত্র নেই। নিয়ম নিয়মই। বিনেশ সবসময়ই বেশি ওজনের বিভাগে লড়ে এসেছে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগই সময়ই ওজন বেশি হয়ে যাওয়ার যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “মনে রাখতে হবে তাকে পর পর তিনটি ম্যাচ খেলতে হয়েছিল। তাকে এনার্জি ফিরিয়ে আনতে পুষ্টিযুক্ত খাবার খেতে হয়। ফোগট ও তাঁর ট্রেনারেরা সারারাত জেগে তার ওজন ৫০ কেজির কম করার চেষ্টা করেছিলেন। তাও ওজন বেশি হলে ডাক্তাররা তার চুলও কেটে দেন।”

এবারের অলিম্পিকসে প্রথম থেকেই বাধা পান বিনেশ। ৫০ কেজি বিনেশের বিভাগই নয়। এই প্রথম এই বিভাগে লড়লেন তিনি। দিল্লিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ৫৩ কেজির ট্রায়ালে জেতেই পারেন নি বিনেশ। তাঁর বদলে যোগ্যতা অর্জন করেন অন্তিম পাঙ্ঘাল। পরে তাঁকে বলা হয় তিনি যদি ট্রায়ালে অন্তিমকে হারাতে পারেন তবেই ৫৩ কেজির বিভাগে লড়তে পারবেন তিনি। কিন্তু অনুশীলনের মধ্যে না থাকায় স্বভাবতই তা পারেন নি তিনি। ফলে ৫০ কেজি বিভাগে লড়তে হয় তাকে। শরীরকে ঠিক রেখে ৩ কেজি ওজন কমাতে হয় তাঁকে। ছন্দে ফিরে আসতে করেছেন বাড়তি অনুশীলন। এতো করেও তীরে এসে ডুবল তরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *