খবরবিদেশসুস্থ থাকুন

আশ্চর্যজনক অভ্যেস ! পানীয় জল হিসেবে কোকো কোলা, মেক্সিকোর চিয়াপাসে 

জল ছাড়া জীবের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না, কারণ জলই জীবন। আর এই পানীয় জলের অভ্যাস প্রায় নেই বললেই চলে মেক্সিকানদের। তাদের বাস্তবজীবনের উদ্বেগজনক ঘটনা যে,এখানে পানীয় জল নয়, কোকা-কোলা হলো প্রধান পানীয়।মেক্সিকোর দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের চিয়াপাস রাজ্যের স্থানীয়দের মধ্যে ঠিক এমনই অভূতপূর্ব জীবনধরা দেখা গিয়েছে।এটি এমন একটি সমাজ যেখানে কোকা-কোলা পান করা একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, আর সেই সঙ্গে এসেছে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা যা ক্রমেই গভীর সংকটের দিকে ইঙ্গিত করেছে।এমনকি চিয়াপাসে দারিদ্র্য, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, এবং নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে অনেক পরিবার দুধের পরিবর্তে কোকা-কোলা ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।যা স্বাভাবিকভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, মাথাপিছু কোক ব্যবহারে মেক্সিকো বিশ্বের শীর্ষে। তথ্য অনুযায়ী,লস অল্টোসের আদিবাসী সম্প্রদায়, চিয়াপাস কোকা-কোলার সবচেয়ে বড়ো গ্রাহক৷ বিশুদ্ধ পানীয় জল সীমিত হওয়ার কারণে, অনেক স্থানীয় লোক হাইড্রেশনের জন্য এই কোমল পানীয়ের তথা কোকো কলার উপর নির্ভর করে। দীর্ঘদিনের এই অভ্যাসটি বাসিন্দাদের মধ্যে কোকা-কোলার উপর নির্ভরতা সৃষ্টি করেছে। চিয়াপাস অ্যান্ড সাউদার্ন বর্ডার মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিসার্চ সেন্টার (সিমসুর) এর ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, গড় চিয়াপাস বাসিন্দারা বছরে ৮০০ লিটারের বেশি কোকা-কোলা গ্রহন করেন।

চিয়াপাসে বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে কোকা-কোলা ঐতিহ্য ও আচার-অনুষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেন। এই সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, কোনো সুখী পারিবারিক সমাবেশ বা একটি বড় খাবার কোক ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। কাছাকাছি একটি কৃষি শহর থেকে ডক্টর ভিসেন্তে ভ্যাকেইরোস নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, “আমি যখন ছোট ছিলাম এবং এখানে আসতাম, তখন চামুলা (চিয়াপাসের একটি গ্রাম) বিচ্ছিন্ন ছিল এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের অ্যাক্সেস ছিল না। এখন, আপনি এই মুহূর্তে বাচ্চাদের কোক পান করা দেখুন, ডায়াবেটিস প্রাপ্তবয়স্কদেরকে আঘাত করছে, কিন্তু এটি আমাদেরকে অভিভূত করে।”

এই পানীয়ের অত্যধিক ব্যবহার জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। স্বাস্থ্যের অধিকারের অবজারভেটরির পরিচালক ডাঃ মার্কোস আরানা সানকে বলেন যে টাইপ টু ডায়াবেটিস এই এলাকায় মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। ডাঃ আরনা যোগ করেছেন যে, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের “মহামারী” “বিপর্যয়মূলক মাত্রায় পৌঁছেছে”। বিশেষজ্ঞ আরও উল্লেখ করেছেন যে অত্যধিক চিনি খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষয় শিশুদের মধ্যে ব্যাপক। স্বাস্থ্য পেশাদারদের পরামর্শ সত্ত্বেও, আসক্ত জনগোষ্ঠীর জন্য এখন তাদের কোকা-কোলা সেবনে কোনো পরিবর্তন করা কঠিন, ডাক্তার এবং চিকিৎসা নৃতত্ত্ববিদ জেইম পেইজ সানকে বলেছেন। এছাড়াও তিনি বলেন, “তারা কোকা কোলা পান করা বন্ধ করতে চায় না। কারণ তারা আসলেই এর প্রতি আসক্ত। মানুষ কোকা কোলায় আসক্ত… এটি এখন দৈনন্দিন খাবারের অংশ। বড় খাবারে সবসময় কোকা কোলা থাকে। বাচ্চাদের দুধ না দিয়ে, তাদের কোকা কোলা দেয় এটা সত্যিই বড় সমস্যা।” 

চিয়াপাসের এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র একটি জনস্বাস্থ্য সংকট নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক সংকটও। কোকা-কোলা পান করা এই অঞ্চলের জনগণের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা পরিবর্তন করা সহজ নয়। তবে, এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। জল, যা জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য, সেটিই এখানে উপেক্ষিত, আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে একটি কার্বনেটেড সফট ড্রিংকস। এ সমস্যা সমাধানে সামগ্রিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপদ পানীয় জল বেছে নিতে পারে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *