পুরাণ ও প্রযুক্তির মিশ্রণে অনবদ্য কল্কি ২৮৯৮ AD, রয়ে গেল কিছু খামতি
সিনেমার নাম – কল্কি ২৮৯৮ AD
পরিচালক – নাগ অশ্বিন
অভিনয়ে – অমিতাভ বচ্চন, প্রভাস, দীপিকা পাড়ুকোন, কমল হাসান প্রমুখ
রেটিং – ৩.৫/৫
কয়েক মাসের যাবতীয় জল্পনার অবসান। মুক্তি পেল কল্কি ২৮৯৮ AD। ভারতীয় সিনেমার এক মাইল ফলক হয়ে থাকবে এই ছবি। তবে থেকে গেল বেশ কিছু খামতি। শুরু থেকে শুরু করা যাক। বিশ্বের প্রথম ও শেষ শহর কাশী। আর কলিযুগের অন্তিম লগ্নে এসে কাশীর প্রেক্ষাপটে শুরু হচ্ছে গল্প। গঙ্গা শুকিয়েছে। প্রযুক্তি শাসন করছে মানুষকে। দিনের পর দিন ন্যায়, সততা প্রকৃতি সবার প্রতি স্বেচ্ছাচারিতা করে মানুষজন আজ এক ফোঁটা জল, একটু অক্সিজেনের সন্ধানে ধুঁকছে। ক্ষমতাশালী, ধনী শাসক অর্থাৎ কলির সুপ্রিম পাওয়ার ইয়াস্কিন (কমল হাসান) তার সাম্রাজ্য কমপ্লেক্সে জল, খাবার সবকিছুর বন্দোবস্ত রেখেছে, কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। এদিকে তাঁর ল্যাবেই সুমতির (দীপিকা পাড়ুকোন) গর্ভে বেড়ে উঠছেন ঈশ্বর। আর এই কাশীতেই কমপ্লেক্সে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ওখানকার অনবদ্য যোদ্ধা ভৈরব (প্রভাস)।অন্যদিকে অভিশপ্ত জীবন নিয়ে ভগবানের দশম অবতারকে রক্ষা করার অপেক্ষায় কোনও এক প্রান্তে ধ্যানমগ্ন অশ্বত্থামা (অমিতাভ বচ্চন)। গর্ভে বেড়ে ওঠা কল্কি অবতারকে রক্ষা করা নিয়েই এগোতে থাকে ছবির গল্প। বাকিটা না বলাই ভালো।
প্রথমে পরিচালক নাগ অশ্বিনকে ধন্যবাদ এইরকম মাপের চিন্তাভাবনার জন্য। এই ছবি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় ছবিকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে সবকিছু সামলাতে গিয়ে কিছুটা খামতি থেকে গেল।
প্রথমে ছবির কিছু ভালো দিক সম্পর্কে বলা যাক –
VFX আকর্ষণীয়। কোথাও কোথাও বর্তমানের যুদ্ধের থেকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধভূমির VFX বেশি নজর কেড়েছে। পুরাণ ও সায়েন্স ফিকশনকে দারুণভাবে মিশিয়েছেন পরিচালক।
ছবিতে প্রভাস যেন একটি অংশ। অমিতাভই প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছেন বারবার। দুরন্ত অভিনয়।
প্রাপ্তি কমল হাসান। আবারও বুঝিয়ে দিলেন তিনি কত বড় মাপের অভিনেতা।একাধিক গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স।
বিজয়, রামগোপাল বর্মা, দুলকের সলমন, রাজামৌলি একের পর চমক মন্দ নয়।
ছবির সেট ডিজাইন ও সিনেমাটোগ্রাফি নজর কাড়বে।
খামতি –
দীপিকার অভিনয় আর ভালো হতে পারত। প্রভাসের অভিনয় মোটামুটি। কমিক টাইমিং বড়ই দুর্বল। সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি ভৈরবকে।
অনেকসময় অ্যাকশন দৃশ্য এত দীর্ঘ, যে একঘেয়েমি আসতে পারে।
অনেকটা জায়গাজুড়ে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না শ্বাশত।
ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর সেভাবে নাড়া দিতে পারেনি।
সুপারস্টারদের এন্ট্রি তেমন চমকপ্রদ নয়।দীর্ঘ অ্যাকশন দৃশ্যের সম্পাদনায় আরও একটু মনোযোগ দেওয়া যেত।
প্রথমার্ধে চিত্রনাট্য আরও একটু ধারালো হতে পারত।
সবমিলিয়ে মন্দ নয় ছবিটি। তবে বাহুবলী বা RRR – র কিছু সিন সিকোয়েন্স বা ডায়ালগ যেভাবে হল থেকে বেরোনোর পরও মাথায় থেকে যায়, এই সিনেমা থেকে তেমন কিছুই প্রাপ্তি নেই। তবে পরবর্তী পার্টের জন্য একটা অপেক্ষা রেখে যায় আর একটি অনবদ্য ভিজ্যুয়াল জার্নির সাক্ষী হন দর্শকরা।