খবরছবিঘর

পৃথিবীর শীতলতম গ্রাম, -৬০ ডিগ্রিতেই দিব্যি জীবনধারণ করছেন এখানাকার মানুষজন

পৃথিবীর বুকে হিমশীতল অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম সাইবেরিয়া। আর এই সাইবেরিয়ার ইয়াকুটিয়া অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম অয়মিয়াকন। প্রায় ৫০০ জন মানুষের একটি ছোট্ট এলাকা। উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান এটি। শীতকালের গড় তাপমাত্রার পৌঁছায় প্রায় -৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।

শীতকালে অয়মিয়াকনে মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য দেখা দেয় সূর্য। প্রায় ২০ ঘণ্টা জুড়ে প্রথমের দিকে একটু মেঘলা পরে ঘন অন্ধকার। এই সময়টায় প্রতিদিন সকাল দশটায় সূর্যোদয় হয় এখানে। আর্কটিক সার্কেল ঘেঁষা এই গ্রাম থেকে নিকটতম বড় শহরের দূরত্ব ৫০০ মাইল।

জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়ে। অয়মিয়াকন গ্রামটি পল অব কোল্ড নামেও পরিচিত। গত সপ্তাহে গ্রামটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় -৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯২৪ সালে এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল -৭১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে অবশ্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির আশপাশে চলে যায়। তবে গরমকাল বেশিদিন স্থায়ী হয় না।

প্রায় সারাদিন কয়লা, কাঠ জ্বালিয়ে ঘর গরম করে রাখা হয়। তবে কোনও কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। জলের পাইপে বরফ জমে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই সেভাবে জলের যোগাযোগ, বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। কোনওরকমে সবকিছুর বন্দোবস্ত করা হয়।

গাড়ির ব্যাটারিতে যাতে বরফ না জমে যায়, সেই জন্য সবসময় স্টার্ট দিয়ে রাখতে হয় গাড়ি।

এখানকার মানুষ এক বিশেষ ধরনের রাশিয়ান চা পান করেন। গ্রাম প্রায় বরফে ঢাকা, তাই কোনও চাষাবাদ হয় না। এখানকার লোকজন পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এইসময় মূলত মাংসের সুপ প্রধান খাদ্য। ঘোড়ার মাংস, রেনডিয়ার, ট্রোগেনিনা, ক্যাটফিস প্রজাতির স্যামন, হোয়াইট ফিস এগুলি খেয়েই বেঁচে থাকে মানুষজন।

প্রায় – ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই বিশ্বের শীতলতম স্কুলে চলে পঠনপাঠন। এই শীতেও ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করে। তবে তাপমাত্রা বাড়লে ছোটোদের স্কুল বন্ধ থাকে। স্কুলটি অয়মিয়াকনেই অবস্থিত। তবে শুধু স্কুল না, পোস্ট অফিস ও ব্যাঙ্কের মতো একাধিক পরিষেবাও জারি থাকে।

গ্লাভস না পরলে কয়েক মুহূর্তেই হাতে পুরোপুরি বরফ জমে যায়। এই মাইনাস তাপমাত্রায় হাইপোথার্মিয়া হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। হার্টবিট দ্রুত হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অবলীলায় বেঁচে আছেন এখানকার মানুষজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *