এক শতাব্দীর সাক্ষী, প্রয়াত বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ
১৯ আগস্ট। স্পেনের কাতালোনিয়ার আকাশে সূর্ অস্তাচলে। তখনই নিভে যাচ্ছে আর এক জীবন প্রদীপ। মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। বয়স ১১৭ বছর। হ্যাঁ শেষমেশ নিয়তির কাছে হার মানলেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা। গত দুই দশক ধরে স্পেনের সান্তা মারিয়া দেল তুরা নার্সিং হোমে ভর্তি ছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগে এক পোস্টে জানিয়েছিলেন দুর্বলতা অনুভব করছেন। বয়স বাড়ায় কানেও কম শুনতেন। শেষমেশ থামল জীবন যুদ্ধ। এদিন X হ্যান্ডেলে মারিয়ার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে তাঁর পরিবার। সেখানে লেখা,”আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। ঘুমের মধ্যে শান্তিতে পাড়ি দিয়েছেন পরলোকে। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন।
একথা বললে খুব একটা ভুল হবে না যে, মারিয়ার জীবন আস্ত একটি মহাকাব্য। পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস,সংগ্রাম না জানি আরও কত কী। ১৯০৭ সালে সান ফ্রান্সিসকোয় জন্ম। তাঁর জন্মের কয়েক বছর আগে পরিবার মেক্সিকো থেকে মার্কিন মুলুকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৫ সালে তাঁরা আবার তাদের আদিনিবাস স্পেনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। জাহাজে পাড়ি দিয়েছিল মারিয়ার পরিবার। এই যাত্রায় তাঁর বাবা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে জাহাজেই মারা যান। বাবার শেষকৃত্য করার কোনও উপায় ছিল না। অগত্যা, বাবার কফিনটি সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালে তিনি চিকিৎসক জোয়ান মোরেটকে বিয়ে করেন। একে একে তিন সন্তানের জন্ম। ১৯৭৬ সালে স্বামী মারা যান। এক ছেলে অগাস্টওপথ দুর্ঘটনায় মারা যান। চোখের সামনে নিজের বাবা,স্বামী ও ছেলের মৃত্যু দেখেছেন মারিয়া। কিন্তু তাঁর প্রতি যেন মুখ ফিরিয়েছিল মৃত্যু।
দেখতে দেখতে একশোর গণ্ডি ছাড়ান। ব্রানিয়াসের নাম নথিভুক্ত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের তালিকায়। কিন্তু তাকেও হার মানতে হল জীবনের চরম সত্যের কাছে। গোটা একটা শতাব্দী পার করে নিভল জীবন প্রদীপ।