হাসিনার পদত্যাগে খালেদার মুক্তি, কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি?
গণবিক্ষোভের মুখে পড়ে পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশ পরিত্যাগ করেছেন। দিকে দিকে বিরোধীদের জয়োল্লাসের ধ্বনি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কয়েক দফা বৈঠক সেরেছেন BNP এবং জামাত-এ-ইসলামীর মত বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে। এর মাঝেই, কয়েক ঘণ্টা পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দীনের আদেশে মুক্তি পেয়ে গেলেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (BNP) সভাপতি খালেদা জিয়া। কিন্তু কে এই খালেদা জিয়া? মুক্তিই বা পেলেন কোথা থেকে? নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্রই।
আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী দল BNP-র সভাপতি খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (BNP) গড়ে ওঠার তিন বছর পরে, ১৯৮১ সালে তাঁর স্বামী ও তৎকালিন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। এর পরেই সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ খালেদার। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে, দু’বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার থাকে তাঁর হাতে। যদিও তাঁর রাজনৈতিক যাত্রার অবসান ঘটে যায় ২০০৬ সালেই। সেবারেও অন্তর্দ্বন্দ্ব ও দ্বেষের কারণে থেমে গিয়েছিল নির্বাচন প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের তত্ত্বাবধান তখন চলে যায় সামরিক বাহিনীর হাতে। এই অন্তর্বর্তী শাসন চলাকালীন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার, খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির কারণে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার করে। দুর্নীতির মধ্যে জড়িত থাকেন তাঁর দুই ছেলেও।
২০১৮ সালে খালেদা জিয়া এই দুর্নীতির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১৭ বছরের কারাগারে দণ্ডিত করা হয় তাঁকে। সম্প্রতি, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বারংবার বিদেশ যাত্রা করতে হয়েছে খালেদাকে। উল্লেখ্য, Corruption Perceptions Index অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ স্থান পায় পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে।
গত জুলাই মাসে বেকারত্বকে কেন্দ্রবিন্দু করে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন কার্যত রণভূমিতে পরিণত করে বাংলাদেশকে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক প্রতিবাদীদের। ছাত্র আন্দোলন রূপান্তরিত হয়েছে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে। ভেঙে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশ মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের মূর্তি। হাসিনার পদত্যাগের পর বিরোধীরা নিজেদের দখলে নিয়ে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে হাসিনার বাসভবন, চালায় লুঠপাট। জানা গেছে, বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশছাড়া হাসিনা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে এসে পৌঁছান। অন্যদিকে, হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন বাংলাদেশে সন্ত্রাস চলছে। রাজনীতিতে আর ফিরছেন না শেখ হাসিনা। এমনিতে তিনি অবসর নিয়েই নিতেন। আপাতত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান। আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনে আশ্রয় নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এখনও অব্দি অশান্তির মধ্যে আছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় হামলার খবর। একদিকে যেমন মন্দির ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ আসছে, অন্যদিকে কিছু জায়গায় মিলেছে ঐক্যের ছবি। দেখা গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের মন্দির ও গির্জা পাহারা দেওয়ার দৃশ্য। আবার, সংসদ ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিষ্কার করতেও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের পড়ুয়াদের। ইতিমধ্যেই সেখানে আটকে থাকা পর্যটকদের ফেরার তাগিদে পেট্রাপোল ও বেনাপোল বন্দরের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে জারি কড়া পাহারা।
আপাতত জানা যাচ্ছে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে চলেছেন। বাংলাদেশে কে হতে চলেছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? শেখ হাসিনা এবং মোদী সরকারের মন্ত্রীত্বে, ভারতের সঙ্গে থাকা বন্ধুত্বের প্রভাব কি পড়তে চলেছে আগামী ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে? শীঘ্রই শান্তি ফিরুক পড়শি দেশে।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল-https://www.youtube.com/@NagarNama42
ফলো করুন ফেসবুক পেজ-https://www.facebook.com/nagarnamanews