কোনও এক ছুটির দুপুরে গন্তব্য হোক লালিগুরাস
রোজকার জীবনে হাঁফিয়ে উঠেছেন। উইকেন্ড প্ল্যান, কাছাকাছি ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেগুলোও বড্ড একঘেয়ে উঠেছে। তাহলে ছুটি নিয়ে একটু দূরে কোথাও ঘুরে আসুন। ঘুরে আসুন নির্জন কোনও প্রান্তে। যেখানে পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙবে আর দারুণ নিস্তব্ধ কোনও সন্ধ্যা চুপি চুপি রাত নামাবে। নদীর ক্ষীণ শব্দ হয়ে উঠবে আপনার রাত জাগার সঙ্গী। তাই সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন উত্তরঙ্গের এমনই এক জায়গা। নাম লালিগুরাস।
চালসা পেরিয়ে সামসিংকে পাশে রেখে কোনও এক নির্জন দুপুরে অল্প চড়াই আর চা বাগানের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে হারিয়ে যান লালিগুরাসের পথে। পাশেই মূর্তি নদী যেন স্নিগ্ধরূপে বয়ে চলেছে। দূর থেকে ভেসে আসছে কোনও অচেনা পাখির ডাক। আর একটু দূরেই ওই যে একে অন্যের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়গুলো। জলের শব্দেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামুক। সূর্যাস্তের মিষ্টি আলো নীল জলে কিছু মনকেমন নিয়ে আসুক। বাড়তি পাওনা, যদি কোনও পূর্ণিমার রাতে এই সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করা যায়।
বলাবাহুল্য, উত্তরবঙ্গের এক নৈসর্গিক জায়গা এটি। অন্যতম সেরা এই পিকনিক স্পটটিকে তিনটি নদী চেল, নেওড়া ও মূর্তি ছুঁয়ে গিয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। লালিগুরাসে মন ভরে গেলে আশপাশের একাধিক জায়গা ঘুরে আসুন। পাশাপাশি রয়েছে মূর্তি রিভার রিসর্ট, গরুমারার জঙ্গল, চাপরামারি, লাটাগুড়ি, চালসা, সামসিং, রকি আইল্যান্ড, সুলতানখোলা সহ নানা জায়গা। চারদিকে চা বাগান, জঙ্গল আর পাহাড়। সত্যি বলতে, শহুরে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার আর এক নাম লালিগুরাস।

অধিকাংশ সময় এখানে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া। তবে ঋতুভেদে এর ভিন্নরূপ নজর কাড়ে। বর্ষাকালে দারুণ মনোরম আবহাওয়া। কখনও ঝিরঝিরে,কখনও আবার প্রবল বৃষ্টি হয় এখানে। সাহস জুটিয়ে যাওয়া যেতেই পারে। উল্লেখ্য, শীতকালে লালিগুরাস অনবদ্য। এইসময় কত অজানা পরিযায়ী পাখি ভিড় জমায় এখানে। অবসরে তাদের সঙ্গে আড্ডা জমে উঠুক। এককথায়, উত্তরবঙ্গের এই ছোট্ট এলাকার মায়া কাটানো এতটা সহজ নয়। সম্প্রতি মেটেলি হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের এই এলাকাটি প্লাস্টিকমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই শহর, দূষণ, ব্যস্ততা পেরিয়ে এক নির্মল পরিবেশের সান্নিধ্য পাবেন।
যাত্রাপথ
কলকাতা থেকে ট্রেনে চড়ে পাড়ি দিতে পারেন। কেউ গাড়ি নিয়েও বেরিয়ে পড়তে পারেন। ট্রেনে গেলে নিকটবর্তী স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে রিসর্ট বা হোমস্টের উদ্দেশে রওনা দিতে হবে। ধূপগুড়ি স্টেশন থেকেও সহজে পৌঁছে যাওয়া যায় লালিগুরাসে।
ঠাঁই
এখানে মাথাগোঁজার ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা হবে না। একাধিক রিসর্ট, হোমস্টে রয়েছে। তিনবেলার খাবারেরও সু-বন্দোবস্ত রয়েছে। যদি কোনও ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যান, তাহলে তেমন কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। খাওয়া-থাকা নিয়ে মাথাপিছু ৫০০০-৬০০০ টাকা খরচ হতে পারে। নিজেরাও বেরিয়ে পড়তে পারেন। সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে ভুলবেন না।