শীতের বিকেল চুপির চরে, গল্প জমে উঠুক পরিযায়ীদের সঙ্গে

কলকাতার খুব কাছেই । একদিনের মধ্যে ঘুরে আসুন এই পরিযায়ী পাখিদের রাজ্যে। জলের গন্ধে, কচুরিপানার ভিড়ে মাছরাঙাদের লড়াইয়ে সামিল হন। ঝাঁকে ঝাঁকে রাঙামুড়ির সঙ্গে ওই দূর আকাশে হারিয়ে যান। এবার শীতের বিকেল কাটুক চুপির চরে।

পূর্বস্থলীর চুপির চর। অশ্বক্ষুরাকৃতির এই হ্রদ লম্বায় প্রায় দশ কিলোমিটার। গভীরতা খুব একটা বেশি নয়। মূল ভাগীরথী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাই ছাড়ি গঙ্গা নামেও পরিচিত এটি। আসলে গঙ্গার প্রবাহপথ পরিবর্তনের ফলে তৈরি হয়েছে এই হ্রদ। তবে শীতকালে এটি পাখিদের স্বর্গরাজ্য। এই সময় এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখি ডেরা জমায়। চুপির অগভীর জলাশয়ে নানা জলজ উদ্ভিদ, মাছ, সাপ, কাঁকড়া, পোকামাকড় রয়েছে। এই খেয়েই শীতের পিকনিক সারে এখানকার পরিযায়ীরা।

চুপির বুকে নৌকাবিহার

শীত পড়লেই সুদূর হিমালয়, ইউরোপ, মঙ্গোলিয়া থেকে নানা রকমের পরিযায়ী পাখি হাজির হয় এখানে। তাই নৌকা করে তাদের ভিড়ে হারিয়ে যান। চুপির চরে দেখা মিলবে ওপেন বিলড স্ট্রক (শামুখখোল), কর্মরেন্ট (পানকৌড়ি), গ্রেট, লিটিল ইগ্রেট, পন্ড হেরন, পার্পল হেরন, কিংফিসার (মাছরাঙা), কটন পিগমি গুস (বালি হাস), পার্পল স্বায়ামফেন (জলমুর্গি), রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড (চোবরা হাঁস), ইউরেশিয়ান কট, এশিয়ান পিয়েড স্টার্লিং সহ নানা প্রজাতির পাখি। কখনও ঝাঁকে ঝাঁকে রাঙামুড়ি ((Red-crested pochard)) উড়ে যায়। একটু দূরেই মাছ খেতে গিয়ে মাছরাঙাদের লড়াই। এসব দেখতে দেখতেই সময় পেরিয়ে যায়। সূর্য দিগন্তের দিকে এগোলে, সে যেন এক আলাদ রূপ নেয় চুপির চর। আশপাশটাও দারুণ। চাষের জমি, আম-কাঁঠালের ক্ষেত আর বিঘার পর বিঘা সর্ষের চাষ। কত যে পাখি, তার হিসেব নেই। তাই একটা শীতের বিকেল এই নাম না জানা পরিযায়ীদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠুন।

যাত্রাপথ

কলকাতা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। হাওড়া-কাটোয়া লাইনে পূর্বস্থলী স্টেশনে নামতে হবে। সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের কাছাকাছি। এরপর টোটো করে পূর্বস্থলীর চুপির কাষ্ঠশালী ঘাটে। ভাড়া ২০ টাকা। চুপি বাজারেও নেমে যাওয়া যায়। তবে একটু হাঁটতে হবে। এবার নৌকো নিয়ে চুপির চরে ঘুরে বেড়ান। ঘণ্টায় ১৫০ টাকা। নৌকোয় একসঙ্গে ৪ জন করে বসতে পারবেন।

যাওয়ার আদর্শ সময়

অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি আদর্শ সময়। নৌকা বিহারের আগে পর্যাপ্ত জল খাবার সঙ্গে রাখা ভালো।

ঠাঁই

একদিনের ট্রিপ হিসেবে উপভোগ্য চুপির চর। যদি পরিযায়ীদের প্রেমে পড়ে আরও একরাত থাকতে ইচ্ছে করে, তাহলে কাছাকাছি হোটেল, সরকারি রিসর্টেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.