সারারাত ধরে আগলে হাতি, প্রাণ বাঁচাল এক অসহায় পরিবারের
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বানভাসি উত্তর থেকে দক্ষিণ। ভারত ভূমি যেন জলের স্রোতে হারাচ্ছে স্বজনদের। প্রকৃতি যখন রোষের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেরলের একের পর এক গ্রামকে, দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে মানুষ থেকে বন্যপ্রাণ সকলেই। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ভেসে আসছে আর্তনাদ। ঠিক এমনই এক কঠিন সময়ে, ওয়েনাড়-এর ভূমিধসের মাঝেই ঘটেছিল একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। সে রাতে সুজাথা অনিনাচিরা ও তাঁর পরিবারকে উদ্ধার করে দিয়েছিল বুনো হাতিরা।
কয়েক মিনিটের মধ্যে কি ধরনের দুর্যোগ ঘটে গেছে, তা বুঝতে দেরী হয়নি সুজাথার। ধসের ফলে বিচ্ছিন্ন হওয়া গ্রাম, ভেসে যাওয়া বাড়িঘর ও অন্ধকারময় এক বিভীষিকা। নিজের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা সুজাথা কোনওমতে নিজেকে ও তাঁর নাতনি মৃদুলা কে বের করে আনেন। পৌঁছে যান নিকটবর্তী পাহাড়ের উঁচু একটি টিলায়। পৌঁছেই কয়েক হাত দূরে দেখা মেলে দুই হস্তিনী এবং একটি বুনো হাতির। তারাও যেন ভীষণ রকম ভয় পেয়েই ছিল।
ঘোর অন্ধকারের মধ্যেই ভয়ে হাত জোড় করে সাহায্য প্রার্থনা করেন সুজাথা। তিনি হাতিদের জানান সবেমাত্র একটি দুর্যোগ থেকে কোনও মতে প্রাণ হাতে বেঁচে ফিরেছেন এই স্থানে। সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া এখন কোন উপায় নেই। আশ্চর্যভাবে, হাতিগুলি তাদের দিকে এগিয়ে আসে এবং তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। সুজাথার সে রাতে বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, প্রকৃতি যেমন তাদের এনে দাঁড় করিয়েছে দুর্গম এই পরিস্থিতিতে, সেরকমই দূত হিসেবে পাঠিয়েছে এই হাতিদেরকেই। তিনি লক্ষ্য করছিলেন, হাতির চোখ দিয়েও জল বেয়ে পড়ছে।
সকাল ছ’টা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদেরকে। এমতাবস্থায় কিছু দয়ালু মানুষ সাহায্যের জন্য এসে পৌঁছান। ততক্ষণ কিন্তু হাতিরা সঙ্গ দিয়েছিল, রক্ষা করেছিল তাঁকে ও নাতনি মৃদুলা কে। দুর্যোগের সেই রাতে বানভাসি চারিদিক, দুজন মানুষ ও হাতিদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল এক অটুট বন্ধন।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল-https://www.youtube.com/@NagarNama42
ফলো করুন ফেসবুক পেজ-https://www.facebook.com/nagarnamanews