খবরমহানগররাজ্য

৩০ বছরের কর্মজীবনে এমন পুলিশি তদন্ত দেখিনি, আর জি কর মামলায় মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির

আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় স্বত:প্রণোদিতভাবে মামলা গ্রহণ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার ছিল তার দ্বিতীয় দিনের শুনানি। গত মঙ্গলবারের শুনানিতে ডাক্তারদের সুরক্ষার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন, CISF-র হাতে হাসপাতালের সুরক্ষার ভার সহ নানা নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি CBI-কে এখনও পর্যন্ত তদন্তের একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এছাড়াও কলকাতা পুলিশকে হাসপাতালে হামলার তদন্তের রিপোর্টও পেশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইমতো বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের তদন্তের কেস ডায়েরি আদালতের কাছে জমা দেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল। এরপরই পুলিশি প্রক্রিয়ার টাইমলাইন নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট।

রাত সাড়ে ১১ টায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয় কেন?

কেস ডায়েরিতে দেখা যায়, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে রাত ১১.৩০ টায়। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, “তাহলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়েরের আগেই ময়নাতদন্ত হয়ে গেল?” আর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা না হলে ময়নাতদন্তের কি প্রয়োজন ছিল?” যদিও রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয় দুপুর ১.৪৫ মিনিট নাগাদ l বিচারপতি জিজ্ঞাসা, “সেটা কোথায় রয়েছে?” সিবাল সদুত্তর দিতে না পারায় বিচারপতির ধমকের মুখে পড়েন। বলা হয়, “পরের দিন কোনও দায়িত্বশীল অফিসারকে নিয়ে আসবেন। কোর্টের সময় এভাবে নষ্ট করবেন না।” আবার রাত সাড়ে ১১ টায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হলে সেই মামলার নম্বর কীভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্টে লেখা রয়েছে? সেই প্রশ্নও করেন প্রধান বিচারপতি। একাধিক বিভ্রান্তির জেরে বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “রাজ্যের পুলিশ যেভাবে তদন্ত করেছে তা আমার ৩০ বছরের কর্মজীবনে কখনও দেখিনি।”

মৃতদেহ উদ্ধারের ১৪ ঘন্টা পর কেন করা হয় FIR?

FIR-এর সময় নিয়েও প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে সকাল ৯ থেকে ৯.৩০ টায়। ময়নাতদন্ত হয়ে গিয়েছে সন্ধ্যা ৬.১০ মিনিট থেকে ৭.১০ মিনিটের মধ্যে। তাহলে মৃতদেহ উদ্ধারের প্রায় ১৪ ঘন্টা পর রাত ১১ টা ৪৫-এ FIR দায়ের হয় কেন ? এতক্ষণ কী করছিল পুলিশ? সিবালের উত্তর, মৃতার বাবাই FIR করতে বারণ করেন। তাই এই দেরি। উত্তরে সন্তুষ্ট হননি বিচারপতিরা। গোটা ঘটনায় অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাদের প্রশ্ন, “কলেজের অধ্যক্ষই কেন সরাসরি FIR করেননি? কার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি?” এছাড়া অপরাধের জায়গা সংরক্ষিত করতে পুলিশের কেন রাত ১১.৩০ পর্যন্ত অপেক্ষা করে? তাই নিয়েও অস্বস্তি প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ।

আদালতের নির্দেশ মেনে সিবিআইয়ের তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন সিবিআইয়ের আইনজীবি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও। মুখবন্ধ খামে সেটি জমা দেওয়া হয়। তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কোনরকম মন্তব্য করেননি আইনজীবি মেহতা। এগুলি ছাড়াও হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তদন্তের রিপোর্টও জমা দেওয়া হয় এদিন। এছাড়া হাসপাতালের নন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের ভূমিকাকে ‘সন্দেহজনক’ বলে উল্লেখ করেন বিচারপতিদের বেঞ্চ। উল্লেখ্য, তিনিই প্রথম মৃতার বাবা মাকে তাঁর আত্মহত্যা খবরটি জানান।

পাশাপাশি এদিন প্রধান বিচারপতি ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন তুলে নেওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, “আইন ও চিকিৎসা কোনওদিন রাস্তায় বসে থাকতে পারে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *