ব্লগনামা

নস্টালজিয়া ! ডুব দিন জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার রেজাল্টের সেই দিনটায়…

‘মাধ্যমিকের রেজাল্ট’! বিষয়টা শুনলেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। বুক দুরু দুরু, কী জানি… কী হবে! রেজাল্টের আগের রাত থেকে টেনশন, সেই সঙ্গে একটা চাপা উত্তেজনা। এতগুলো বছর পেরিয়ে যখন দেখি নিজের ভাই, বোন বা আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশি ‘খুদে’টা একটা হবু দাদা-দিদি হওয়ার রোম্যান্টিসিজমে ডুবে আছে অথচ অন্যদিকে, রেজাল্ট নিয়ে চোখে-মুখে একটা চিন্তার ছাপ স্পষ্ট, তখন নিজের সঙ্গে একটা অদ্ভূত মিল পাই। সেটা অবশ্য কেবল আমি কেন প্রতিটা মানুষই খুঁজে পাবে।

যাই হোক, এতক্ষণে রেজাল্ট প্রকাশিত। চিন্তার ছাপটা রোল নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইটে এন্টার করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটা অনাবিল হাসিতে পরিণত হয়েছে। আজকের দিনটা প্রতিটা মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। রেজাল্ট আনতে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে আজ আবর্জনার স্তূপটাও সদ্য পাশ করা ছেলেটা বা মেয়েটার গোলাপের মতোই সুন্দর লেগেছে। তা তো হবেই, যুদ্ধে জিতেছে যে সে।

আবার এই মাধ্যমিক কিছু হারানোরও সাক্ষী। যে বন্ধুদের সঙ্গে এতদিন ধরে টিফিন ভাগাভাগি হত, দিনের সাত-আট ঘণ্টা কাটত, এবার তাদের মধ্যেই কেউ কেউ ক্যারামের ঘুঁটির মতোই এদিক-ওদিক ছিটকে যাবে। অনেকে সেই স্কুলেই থাকবে, আবার অনেকে চলে যাবে অন্যত্র।

সত্যি! কত কিছুরই সাক্ষী না এই মাধ্যমিকের রেজাল্টের দিনটা? এমন একটা দিন, যেখানে জীবনের প্রথম বড় প্রাপ্তি থাকে, আবার থাকে ছোট-ছোট হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা। আসলে এদিনই হয়তো আমরাও বড় হয়ে গিয়েছিলাম, আজও বড় হল অনেকে। ওই যে বললাম না, আজ ওরা ‘দাদা’ বা ‘দিদি’ হয়ে গেল।

কিন্তু জীবনের এই রঙ্গমঞ্চ যে আরও বড়। একটা মন্ত্রই বিশ্বাস করি, নিজে সৎ থেকে এগিয়ে গেলে জীবনের এমন আরও অনেক পরীক্ষায় পাশ হবই। আগামী প্রজন্মও এটাই শিখুক। শুধু চারাগাছে ছায়া দিক বড়রা। কেউ চাক বা না চাক, কুঁড়িগুলো ফুটে উঠুক।

প্রতিটা বছর এই মাধ্যমিকের রেজাল্টের দিনটা ঘুরে ফিরে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে দমকা হাওয়ার মতো কিছু স্মৃতি‌। ক্লাস টেন, টিউশন, প্রথম প্রেম, টেস্ট পেপার, কোচিং…আর আমাদের বাংলা মিডিয়াম। বছর-বছর আসুক এই দিনটা, সঙ্গে নিয়ে আসুক স্মৃতি। সূর্য যখন পশ্চিমে নৈবেদ্যর ডালি নিয়ে অস্তাচলে অগ্রসর হবে, সেই দিনটা অবধি এর রেশ থেকে যাবে, এটাই তো বেশ থাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *