কোনওটি পাণ্ডবদের হাতে তৈরি , কোনওটি দ্বিতীয়বার নির্মাণ অসম্ভব ; রইল ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরের তালিকা
ভারত। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী আমাদের এই দেশ। যা সমগ্র বিশ্বকে এক অকল্পনীয় আধ্যাত্মিক দিকের সঙ্গে পরিচয় করায়। এই পুণ্যভূমির নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রহস্য, চোখ ধাঁধানো স্থাপত্য আর ভাস্কর্য। আর এর অন্যতম পীঠস্থান হল দেশের প্রাচীনতম মন্দিরগুলি। কোনওটি গড়ে তুলেছিলেন পাণ্ডবরা। কোনওটি আবার এমন পদ্ধতিতে তৈরি, যা দ্বিতীয়বার তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিশদে।
বাদামী গুহা মন্দির, কর্নাটক (Badami Cave Temples, Karnataka)
জৈন, বৌদ্ধ ও হিন্দু গুহা মন্দিরের এক অপূর্ব মিশ্রণ। এটি ষষ্ঠ শতাব্দীতে গড়ে ওঠে। চালুক্য স্থাপত্যকলায় নির্মিত এই মন্দিরের ছয়টি গুহা রয়েছে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে প্রথম তিনটি, চতুর্থটি জৈন ও পঞ্চমটি বৌদ্ধমতে গড়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে ষষ্ঠ গুহার আবিষ্কার হয়। এতে হিন্দুত্বের ছোঁয়া রয়েছে ।
আদি কুম্বেশ্বর মন্দির, তামিলনাড়ু (Adi Kumbeswara Temple, Tamil Nadu)
চোল রাজত্বের আমলে গড়ে ওঠে আদি কুম্বেশ্বর মন্দির। ৩০,১৮১ বর্গফুট এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরের পূর্ব দিকের স্তম্ভটি সর্বাধিক লম্বা উচ্চতা প্রায় ১৮০ ফুট বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে এখানে মাসিমগম নামের এক উৎসব হয়।
কৈলাসনাথ মন্দির, ইলোরা (Kailashnath Temple, Ellora)
একটা পাথরেই খোদাই করে এক অদ্ভুত স্থাপত্যের সৃষ্টি। ইলোরার ৩৪ টি গুহার মধ্যে ১৬ নম্বর গুহায় এই মন্দির। ইতিহাস বলছে, অষ্টম শতাব্দীতে পল্লব স্থাপত্যকলায় এই মন্দির নির্মিত হয়। অদূর ভবিষ্যতেও এই ধরনের স্থাপত্য গড়ে ওঠা অসম্ভব।
লডখন মন্দির, কর্ণাটক (Lad Khan Temple, Karnataka)
পঞ্চম শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। চালুক্যদের আমলে পঞ্চায়তন স্থাপত্যকলায় গড়ে উঠেছে মন্দিরটি। এর মধ্যে ১২টি স্তম্ভ রয়েছে। মাঝে একটি জায়গা রয়েছে। যা ভগবান শিবের প্রতি উৎসর্গীকৃত।
দিলওয়ারা মন্দির, রাজস্থান (Dilwara Temples, Rajasthan)
এটি জৈন মন্দির। আনুমানিক ১১-১৩ শতাব্দীর মধ্যে গড়ে উঠেছে মন্দিরটি । পুরোপুরি মার্বেল দিয়েই পাঁচটি মন্দির তৈরি করা হয়েছে। তবে স্থাপত্য গুণে এগুলি একে অন্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাশাপাশি এদের একটি ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। মন্দিরের দরজা, স্তম্ভ,ছাদ প্রতিটি জায়গায় মার্বেলের কাজ আপনার নজর কাড়বে।
ব্রহ্মা মন্দির, পুষ্কর (Brahma Mandir, Rajasthan)
১৪ শতাব্দীতেই রাজস্থানে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। কথিত আছে, প্রায় ২০০০ বছর আগে ঋষি বিশ্বামিত্র স্বয়ং গড়ে তোলেন মন্দিরটি। আমাদের দেশে ভগবান ব্রহ্মাকে উৎসর্গ করে মন্দিরের সংখ্যা খুবই সীমিত । তার মধ্যে নজর কাড়বে এই মন্দির।
কোনার্কের সূর্য মন্দির, ওড়িশা (Konark Sun Temple, Odisha)
ইতিমধ্যেই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে এই মন্দির। ১৩ শতকে গড়ে ওঠা কোনার্কের সূর্য মন্দিরের স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য রীতিমতো নজর কাড়বে। রথের আদলে তৈরি হয়েছে এটি। রয়েছে ১২ জোড়া চাকা ও সাতটি ঘোড়া। কলিঙ্গ স্থাপত্য কলার এক অদ্ভুত নিদর্শন এই মন্দির।
তুঙ্গনাথ মন্দির, উত্তরাখণ্ড (Tungnath Temple, Uttarakhand)
বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক উচ্চ শিবের মন্দির। এটি ঠিক কোন সময়ে গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে তেমন কোনও তথ্য মেলেনি। কথিত আছে, পাণ্ডবরা এই মন্দির নির্মাণ করেন। তবে, আয়তনে এটি খুব ছোটো। মন্দিরে একসঙ্গে ১০ জনের বেশি দাঁড়াতে পারবে না। কালো পাথর দিয়ে খানিকটা কেদারনাথ মন্দিরের আদলে গড়ে উঠেছে এটি।
মহাবলীপুরম মন্দির,তামিলনাড়ু (Mahabalipuram Temple, Tamil Nadu)
সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দীর স্থাপত্য কলার অন্যতম নিদর্শন এই শিবের মন্দির। ইতিমধ্যেই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে এটি। মন্দিরটি একটি বিশেষ আকারকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি। রথ, মণ্ডপ সমস্ত আকৃতির মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে এই মহাবলীপুরম মন্দির।
মুণ্ডেশ্বরী দেবী মন্দির, বিহার (Mundeshwari Devi Temple, Bihar)
শিব ও শক্তি পূজিত হয় এই মন্দিরে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মন্দির এটি। অক্টাগন স্টাইলে গড়ে উঠেছে মুণ্ডেশ্বরী দেবী মন্দির। এই ধরনের স্থাপত্য নিদর্শন যদিও খুব একটা দেখা যায় না।