অন্যরকমখবর

এখানে সেতুগুলি জীবন্ত, বছরের পর বছর মানুষ পারাপারে ব্যস্ত

চেরাপুঞ্জি। বৃষ্টি শব্দটি মাথায় এলে এই জায়গার অপরূপ সৌন্দর্যের কথা বারবার মনে পড়ে। আর এখানেই এক আশ্চর্য জিনিস রয়েছে। প্রকৃতির কৃপায় গড়ে উঠেছে এক জীবন্ত সেতু। কয়েকশো বছর পেরিয়ে এখনও মানুষ পারাপারে ব্যস্ত সেই সেতুগুলি। আসুন, একবার ঘুরে আসা যাক জীবন্ত সেতুর দেশে।

বৃষ্টি থামার পর চেরাপুঞ্জির সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো রীতিমতো অসম্ভব। সে এক নৈসর্গিক উপলব্ধি। আর এখানেই ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ যেন বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক দুর্দান্ত উদাহরণ। বলা ভালো, প্রকৃতি ও মানুষের এক অটুট বন্ধনের নিদর্শন এই সেতুগুলি। কিন্তু জীবন্ত কীভাবে ? কী এই রহস্য ? তা জানতে হলে প্রথমেই ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়ের শহর চেরাপুঞ্জিতে পৌঁছাতে হবে। এখানে পূর্ব খাসি পাহাড়ের নংগ্রিয়াট, টির্না, মাওলান্নং, রিওয়াই সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা হবে এই জীবন্ত সেতুদের সঙ্গে।

এই লিভিং রুট ব্রিজটি থাইলং নদীর উপর অবস্থিত। যা ছড়িয়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে। খাসি ও জয়ন্তিয়া উপজাতির লোকজনই এই অদ্ভুত নিদর্শনের নেপথ্যে রয়েছেন। আসলে এই জীবন্ত সেতু তৈরি হয় ফাইকাস ইলাস্টিকা (Ficus elastica) নামে এক রাবার গাছের মূল দিয়ে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এখানকার জঙ্গলের রাবার গাছে এক ধরনের ঝুরি মূল দেখা যায়। এগুলি অত্যন্ত দৃঢ় হয়। আর এখান থেকেই উপজাতির লোকজন তৈরি করে ফেলেন নদী পারাপারের সেতু। স্থানীয় ভাষায় ‘উমসিয়াং ডাবল-ডেকার রুট ব্রিজ’ নামেও পরিচিত এটি। বলা বাহুল্য, গাছের শিকড়ে তৈরি এই দ্বিস্তরীয় তথা দু’তলা সেতুর কার্যক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। কারণ বহু বছর ধরে এই সেতুর উপর দিয়ে পারাপার করছেন মানুষজন। কিন্তু এখনও অক্ষত এর বাঁধুনি।

শোনা যায়, জঙ্গলে বসবাসকারী খাসিয়া উপজাতির লোকজন নিজেদের সুবিধার্থে এই সেতু তৈরি করেছিলেন। শক্ত গুঁড়ি বা কাণ্ডকে কেটে, তাতে রাবার গাছের ঝুরি মূল জড়িয়ে তৈরি হয়েছিল সেতুগুলি। যা আজও বর্তমান। তাই সুযোগ পেলে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি গায়ে মাখার পাশাপাশি এই সেতু পারাপারের অভিজ্ঞতাও নেওয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *