রবিবারের দুপুর কাটুক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িতে
কলকাতার খুব কাছে। একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসা যায়। তাই রবিবারের দুপুর কাটুক কোন্নগরের ২ নম্বর মীরপাড়া লেনের অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িতে। চারদিকের প্রবল ব্যস্ততা আর ভিড়ের মাঝে গঙ্গাতীরের এই বাড়ি এক আলাদা শান্তি দেবে আপনাকে।
এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির পিছনেও এক আইনি লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে। ২০০৭ সালে বাম আমলে বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়। এরপর হঠাৎ বাড়িটির হাতবদল হয়ে যায় লাখোটিয়াদের হাতে। বহুতল তোলার আবেদন তোলে লাখোটিয়ারা। শুরু হয় আইনি লড়াই। বর্তমান শাসক দলও চেষ্টা চালিয়েছে। হেরিটেজ রক্ষায় সরব হন আশপাশের মানুষজনও। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়। দীর্ঘ কয়েক বছরের আইলি লড়াইয়ের পর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে সম্মত হয় লাখোটিয়া গোষ্ঠী। ধীরে ধীরে সাজিয়ে তোলা হয় অবন ঠাকুরের বাগানবাড়ি।
এই বাগানবাড়িতে একটা দুপুর কাটালে মন্দ লাগবে না। গঙ্গার ধারে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। অবনী ঠাকুরের মূর্তি, ছবি সংগ্রহশালা নজর কাড়বে। সামনের গেট থেকে শুরু করে পুরো বাড়ির সংস্কার করা হয়েছে। বাগান বাড়ির একপাশে খড়ের চালার আদলে একটি ঘর রয়েছে। বাগান বাড়ির ভিতরে যে কাঁঠাল গাছের নিচে বসে অবনী আঁকাআঁকি করতেন বা বিশ্রাম নিতেন। সেই গাছের চারপাশটা বাঁধানো হয়েছে। বাগান বাড়ির ভিতরে যে গঙ্গার ঘাটটি ভাঙনে হারিয়ে গিয়েছিল, তা খানিকটা পাইলিং করা হয়েছে। বাড়ির কড়ি-বরগাগুলি রঙ করা হয়েছে। বাড়ির ৯ টি ঘর সংস্কার করা হয়েছে। মূল ভবনের পিছনে প্রায় ৮ কাঠা জমির উপরে ছিল হেয়ার সাহেবের সুইমিং পুল। সেটি এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই সুইমিং পুলের সংস্কার করে রঙিন মাছ ও পদ্মফুলের চাষ করা হয়েছে। বাড়ির পশ্চিমদিকে রয়েছে মুক্তমঞ্চ। বাগান বাড়ির ভিতরে একটি ফিটন গাড়ি রাখারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একসময় ঘোড়ায় টানা সেই ফিটন গাড়ি করেই কলকাতা থেকে কোন্নগরের বাগান বাড়িতে আসতেন অবনীন্দ্রনাথ।
ভবিষ্যতে এই বাগানবাড়িকে আরও ভালো করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সামনের ফাঁকা জমিতে ছাত্রাবাস, আর্ট কলেজ গড়ে তোলার কথা চলছে। বাগানবাড়ির ওপারে রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। সবমিলিয়ে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ নিয়ে গঙ্গাতীরে একটা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। তাই সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন। কলকাতা থেকে খুব কাছে। একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসা যাবে। তাই আলাদা করে মাথা গোঁজার জন্য কোনও ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই।