দুরন্ত

স্মৃতির খোলামকুচি, মনকেমন আর ফেলে আসা দিন নিয়ে লেখিকার একতরফা কারবার। তাদেরই বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখার চেষ্টা। তাই দিয়েই লিখতে শুরু করলেন নতুন সিরিজ দুরন্ত। নির্দিষ্ট সময় অন্তর আসবে নতুন পর্ব। তবে নিজের পরিচয় আড়ালে রাখতে চান তিনি। তাই আপাতত তাঁর পরিচয় – কালবৈশাখী।

দুরন্ত (১)

মেয়েবেলায় কাটানো দুরন্ত গ্ৰীষ্মের ছুটিতে তুই আসতিস মামারবাড়ি বেড়াতে। তপ্ত দুপুরে মুখ লাল করে বাড়ির সামনের কাঁচা রাস্তাটায় পিঠের পিছনে প্রজাপতির ডানা লাগিয়ে আমরা দৌড়ে বেড়াতাম। শ্রান্ত বিকেল কাটিয়ে যখন কচি মুকুলের গন্ধ ছড়ানো সন্ধ্যা নামত, আমি আর তুই ছোঁয়া-ছুঁই খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরতাম।

আজও বাড়ি ফিরি একই রাস্তা দিয়ে। এখনের পিচঢালা রাস্তায় তোর আমার দিনগুলো আর ফেরে না…

দুরন্ত (২)

বয়স তখন তেরোর গন্ডি পেরোচ্ছে না কিছুতেই।

ছেলেমানুষ থেকে মেয়ে মানুষ হয়ে ওঠার কি নিদারুণ প্রচেষ্ঠা । আমি দস্যি ছিলাম , মেয়ের থেকে ছেলে ছিলাম বেশি।

সেই নীল-কালো হাফ-প্যান্টটা পরে গোটা মাঠজুড়ে তোর সাথে পাল্লা দিয়ে সাইকেল নিয়ে চরকির মতো পাক দিতাম । ঘাম ভিজে জামা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বুঝতাম তোর চোখ শুধু আমার এই শয়তানি মাখা মুখটা দেখতেই অভ্যস্ত , সামনের বাড়ির ভাড়াটিয়া দাদার মতো ঘামে ভেজা উর্ধাঙ্গ নয়।

এখনও কি দেখিস আমার মুখটা ? তোর কালো ফ্রেমের চশমার ভিতর দিয়ে ,সেই দশ বছর আগের মতো ?

কীরে , দেখিস ?

দুরন্ত (৩)

অনেকগুলোর মধ্যে হেমন্তের একটা মনখারাপি দুপুর, আমি ঠোঁটের উপর কলম চেপে মনের ভাবনাতে তোলপাড়। তোরও হয়তো চলছে এখন পরীক্ষার জ্বালাতন। দুঃসাহসিক এক পরিকল্পনাতে চিঠি দিয়েছি তোদের কোয়ার্টারের ঠিকানায়।

আমার ডাকাত ডাকাত মন সুতো কাটা ঘুড়ির মতো গোত্তা খেয়ে ফিরছে সারা ছাদ। যে ছাদে ছড়ানো আছে আমার আর তোর বৈশাখী খেলাঘর। এই দস্যিপনার ছাদ ,ছাদের পাশে চিলের ঘর, রোদে মজানো আমতেল- আচারের বয়াম কোনও কিছুই জমছেনা আর তুই ছাড়া।

ক্যালেন্ডারে রোজ গোল্লা পাকাই তোর পাঠানো পোস্টকার্ডের অপেক্ষায়। গরমের সময় শুকতারাগুলো আনতে ভুলবি না তো ? নয়তো তোর সাথে একদম আড়ি…

দুরন্ত (৪)

জীবন যেন ডায়েরির পাতা

এতদিন পর আবার ঝোড়ো হাওয়ার মতো এলোমেলো পাতা ছুটে আসে স্মৃতির সাঁকো ধরে।

শীতের সময় ঘুড়ির মেলার দিন, আমাদের পাড়াতেও রেওয়াজ ছিল ঘুড়ির লড়াই। তুমুল উত্তেজনায় চলছে সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া, কাঁচের গুঁড়ো কাগজে নিয়ে আমিও আছি পিছন পিছন। এমন হুড়োহুড়ির মধ্যে হঠাৎ বা হাতে আলতো টান-

মুহূর্ত-ঘণ্টা- দর্প-পল থমকে গেছে সব…..

মনখারাপি হেমন্তের পর রূক্ষ শীতে সদ্য ফোটা ডালিয়া ফুলের রং ছড়িয়ে দিল কেউ সমস্ত গালে।

‘সু’ এসেছে আমার দ্বারে , অসময়ের শিরশিরে বৃষ্টি হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.